খবর

আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে অর্থনীতিই প্রধান চ্যালেঞ্জ: সালমান এফ রহমান

4 September, 2023
Source: Channel-i web portal

প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেছেন, বর্তমান সময়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে অর্থনীতিই প্রধান। এখন ইকনোমিক ডিপ্লোম্যাসির যুগ। এ বিষয়টিকে জোর দিয়ে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। যার সুফল এরইমধ্যে দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের বিষয়ে তিনি বলেন, তাদের সঙ্গে বৈরি সম্পর্ক থাকলে কী ৪০টি মার্কিন কোম্পানি এদেশে ব্যবসা বিনিয়োগের প্রস্তাব নিয়ে আসতেন?


চ্যানেল আই’য়ের সাথে এক সাক্ষাৎকালে তিনি এই কথা জানান।


নিজের ওপর অর্পিত দায়িত্বের বাইরেও তিনি বিভিন্ন ক্ষেত্রে অসাধারণ সফলতার প্রমাণ দিচ্ছেন। এই বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করতে গেলে স্বাভাবিকভাবে অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের কাজগুলো চলে আসছে। এসব মন্ত্রণালয়ের কাজগুলোকে তিনি সমন্বয় করছেন জানান তিনি।


সাম্প্রতিক সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে সৃষ্ট টানাপোড়েন লাঘবে তার তৎপরতা এবং অর্জিত সাফল্য রাজনৈতিক অঙ্গনে এক ধরনের স্বস্তি ফিরিয়ে এনেছে। এক্ষেত্রে তার বিশেষ ভূমিকা পালন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দেখুন গোটা পৃথিবীতে এখন একটি দেশের সঙ্গে আরেকটি দেশের সম্পর্ক স্থাপন এবং উন্নয়নের লক্ষ্যটাই হলো পারস্পরিক ব্যবসা-বাণিজ্য তথা অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিস্তৃতি। প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প এবং বিনিয়োগ উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বলেন কিংবা চীন, জাপান অথবা ইউরোপীয় দেশগুলোর কথাই বলেন- সবার সঙ্গেই সুসম্পর্ক বজায় রাখার কাজটি করতে হচ্ছে জানান সালমান এফ রহমান।


বিদেশি বিনিয়োগকারীদের এদেশে বিভিন্ন ব্যবসার সম্প্রসারণ ও শিল্প প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে আগ্রহী করতে হলে আগে সেই সব দেশের সঙ্গে চমৎকার সম্পর্ক রক্ষায় সম্ভাব্য সবকিছু করতে হবে । এক্ষেত্রে তিনি কী কোনো ধরনের চাপ অনুভব করছেন? প্রশ্ন করা হলে তিনি জবাব দেন, না। যুক্তি দিয়ে তিনি বলেন, দেখুন, বন্ধুর সাথে চলতে গেলে আমাদের মাঝে মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়। তেমনিভাবে একটি রাষ্ট্রের সঙ্গে আরেকটি রাষ্ট্রের ভুল বোঝাবুঝি হতে পারে। প্রত্যেকেরই লক্ষ্য থাকে তার নিজ নিজ স্বার্থ রক্ষা করা। আমি যেমন আমার স্বার্থটা দেখবো, তেমনিভাবে অন্য রাষ্ট্রও তার স্বার্থপূরণের ব্যাপারে গুরুত্ব দেবে।


প্রখ্যাত ভারতীয় সাংবাদিক, সুবীর ভৌমিকের বিভিন্ন সময় সালমান এফ রহমানের নানা ভূমিকা নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য এবং রিপোর্ট প্রকাশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। এ বিষয়ে সালমান এফ রহমানের মন্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাকে হেয় প্রতিপন্ন করতে উদ্দেশ্য প্রণোদিত হয়ে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। যার সঙ্গে তার কোনোদিন দেখা হয়নি কিংবা কথাও হয়নি। অথচ সে তার সম্পর্কে মিথ্যা, কাল্পনিক ও বানোয়াট সংবাদ প্রচার করছেন দাবি করেন তিনি । এটা হলুদ সাংবাদিকতার নগ্ন প্রকাশ ছাড়া আর কিছু নয়, বলেন সালমান এফ রহমান।


নির্বাচন সামনে রেখে নানা রকম ষড়যন্ত্র হচ্ছে দাবি করেন প্রধানমন্ত্রীর এ উপদেষ্টা। বলেন, বিএনপি এক দফা দাবিতে ষড়যন্ত্র করছে। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীরা আবারও দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রে সক্রিয় হয়ে ওঠেছে । তিনি বলেন, ষড়যন্ত্র ছিল, আছে এবং থাকবে। সব ষড়যন্ত্রকারীদের মোকাবেলা করে সামনে এগিয়ে যেতে হবে।


বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে সালমান এফ রহমান বলেন, ১৯৭১ সালে বৈদেশিক রিজার্ভ ছিল শূন্য। সে সময় অন্য দেশের সঙ্গে বিনিময় প্রথার মাধ্যমে প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানির শুরু করে সরকার। পাট ও চামড়া ছিল বাংলাদেশের বিনিময় পণ্য। তবে ২০০৯ সাল থেকে আওয়ামী লীগ টানা ক্ষমতায় থাকায় আজ দেশের রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ২৯,৭৩২.১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। বাংলাদেশ আজ বিশ্বের বুকে উন্নয়নের রোল মডেল।


তিনি বলেন, এদেশের স্বাধীনতা আপনা-আপনি আসেনি। এ জন্য অনেক ত্যাগ শিকার করতে হয়েছে। এ মূল্যবান জিনিসটির জন্য বঙ্গবন্ধুকে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। তিনি বলেন, পাকিস্তান আমলে বড় বড় ব্যবসায়ীদের সবই ছিল পশ্চিম পাকিস্তানের। দেশ স্বাধীন না হলে আমাদের মতো বড় বড় কোম্পানিগুলো এতো বড় জায়গায় আসতে পারতো না।


বর্তমানে আমাদের অর্থনীতিতে মূল্যস্ফীতি, রিজার্ভ কমে যাওয়াসহ রপ্তানির পরিমাণ হ্রাস নিয়ে এক ধরনের দুশ্চিন্তা ও হতাশা ভর করেছে। এই মুহর্তে আমাদের অর্থনীতিতে কী সত্যি কোন চ্যালেঞ্জ রয়েছে বলে মনে করছেন কিনা প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, হ্যাঁ, কিছুটা চ্যালেঞ্জ তো আছে। কোভিডের ধাক্কা সামলে বাংলাদেশের অর্থনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ সবকিছুই ঠিক ঘুরে দাঁড়াচ্ছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা যখন আবার আগের শক্ত অবস্থানের দিকে ফিরছিলাম তখনই শুরু হলো ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ। যার প্রভাবে গোটা বিশ্বের অর্থনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য, পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থায় এক ধরনের কালো ছায়া নেমে আসে। তিনি আশাবাদী, বাংলাদেশ সব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে ঠিকই আগের অবস্থানে ফিরে আসবে। অচিরেই বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি আগের অবস্থান থেকে ছাড়িয়ে যাবে। আগামী ২০২৪ সালের প্রথম থেকেই বাংলাদেশের অর্থনীতি শক্ত অবস্থানে চলে আসবে আশা করেন তিনি।


বাংলাদেশের রাজনীতিতে বর্তমানে এক ধরনের অস্বস্তি, অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে। এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মহলের চাপ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কারো কারো মতে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্র ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলো বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, শান্তিপূর্ণ, অংশগ্রহণমূলক করতে নানা তৎপরতা চালাচ্ছে। যাকে কেন্দ্র করে এক ধরনের অস্বস্তি সৃষ্টি হয়েছে, এই বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা সব সময় ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কার সাথে বৈরিতা নয়,’ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রবর্তিত পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করে পৃথিবীর সব দেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে চলছি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক কোনভাবেই অবনতি ঘটেনি। বরং আগের যে কোন সময়ের চেয়ে ভালো অবস্থায় রয়েছে।


ব্রিকস সম্মেলনে নিয়ে সালমান এফ রহমান বলেন, এ সংস্থার সদস্য হতে চাইলে কোন দেশকে আবেদন করতে হয়না, ব্রিকস কমিটি নিজে থেকেই সদস্য হিসেবে বিভিন্ন দেশকে এবারই প্রথম অন্তর্ভুক্ত করেছে। তারা এ বিষয়ে নীতিমালা প্রণয়ন করে তার ভিত্তিতে বিভিন্ন দেশকে সদস্য করে ।এবারের সম্মেলনে কয়েকটি দেশকে নতুন সদস্য হিসেবে অন্তভুক্ত হতে আমন্ত্রণ জানিয়েছে ব্রিকস। এক্ষেত্রে দেশগুলোর অর্থনৈতিক অবস্থান মোটেও গুরুত্বপূর্ণ ছিলনা। তারা পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বাছাই করে নতুন কয়েকটি দেশকে সদস্য করেছে। এখানে অঞ্চলগত অবস্থানটাই ছিল মূখ্য বিষয়। এখন সদস্য হতে না পারলেও আমাদের আক্ষেপ কিংবা ব্যর্থতা নেই। আমরা নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক এর সদস্য হয়েছি। এটাই আমাদের দরকার ছিল দেশের অর্থনৈতিক ভিত্তিকে মজবুত রাখার জন্য। এটা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচক্ষণতা এবং প্রজ্ঞার ফসল। তার ইকনোমিক ডিপ্লোম্যাসির একটি অনন্য অর্জনও বলা যায়।


সালমান এফ রহমানের নানা কর্মকাণ্ড নিয়ে মাঝেমাঝেই দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা, বিতর্ক শোনা যায়। একজন বড় অংকের ঋণ খেলাপি, শেয়ার বাজার কেলেঙ্কারিতে তার সম্পৃক্ত থাকা এবং সাম্প্রতিক সময়ে একটি ব্যাংক থেকে বিশাল অংকের ঋণ গ্রহণ নিয়ে আলোচনা চলছে। সে প্রেক্ষিতে তিনি বলেন, হ্যাঁ তিনি ঋণ খেলাপি হয়েছি এটা মিথ্যা নয়। কিন্তু তাকে ঋণ খেলাপি হতে বাধ্য করা হয়েছিল। ২০০১-২০০৬ সালে বিএনপি ক্ষমতাসীন থাকাকালে সব ব্যাংকেই বেক্সিমকোর সব ক্রেডিট লাইন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। সেসময় বেক্সিমকোর নামে কোন ঋণ বিতরণ করেনি কোন ব্যাংক। আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলো তখন বন্ধ হয়ে যাচ্ছিলো। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন দেওয়ার মতো অবস্থা ছিলনা। তখন আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য সবকিছুই জোর করে থামিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ফলে বেক্সিমকোর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ঋণ খেলাপি হয়ে যায়। শেয়ারবাজার নিয়ে উচ্চ আদালতে আমাদের নির্দোষ হিসেবে রায় দেওয়া হয়েছে। তারপরও সিকিউরিটিজ এক্সচেঞ্জ কমিশন তার বিরুদ্ধে একটি আপিল করেছে। এটাও অচিরেই নিস্পত্তি হয়ে যাবে আশ করেন সালমান এফ রহমান ।


তিনি বলেন, হালে একটি ব্যাংক থেকে আমাদের ২২ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়া সম্পর্কে যে খবর ছড়ানো হয়েছে। সেটা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। মূলত, আমার ক্রমাগত সাফল্যে একটি মহল ঈর্ষান্বিত হয়ে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে আমাকে হেয় করতে, আমার কর্মকাণ্ডকে থামিয়ে দিতেই এসব করছে। সামনেই নির্বাচন। যাতে আমি সক্রিয়ভাবে বর্তমান সরকারের পক্ষে কাজ করতে না পারি। সেজন্য জোর করে একটি মহল ষড়যন্ত্রমূলকভাবে নানা অপপ্রচার চালাচ্ছে।


সালমান এফ রহমান রাজনীতি ও অর্থনৈতিক অঙ্গনে আলোচিত এক ব্যক্তিত্ব। ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্পদ্যোগ, বিনিয়োগ, সর্বোপরি দেশের অর্থনীতিতে তিনি নানাভাবে যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনিভাবে রাজনৈতিক অঙ্গনেও তার পদচারণা ক্রমেই বেশ জোরালো হয়ে উঠেছে। একইভাবে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের স্বার্থসংরক্ষণসহ কূটনৈতিক সম্পর্কে নতুন মাত্রা যোগের ক্ষেত্রে তার অসাধারণ দক্ষতা, প্রচেষ্টা এবং সফলতা রাষ্ট্রীয়ভাবে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সাম্প্রতিক সময়ে সৃষ্ট কূটনৈতিক সম্পর্কের টানাপোড়েন লাঘব করে চমৎকার অবস্থায় ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে তার তৎপরতা এবং অর্জিত সাফল্য রাজনৈতিক অঙ্গনে এক ধরনের স্বস্তি ফিরিয়ে এনেছে। একজন পূর্ণমন্ত্রীর মর্যাদায় প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারী শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করলেও সালমান এফ রহমান তার ওপর অর্পিত দায়িত্বের বাইরেও দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে রাষ্ট্রক্ষমতা পরিচালনার কেন্দ্রবিন্দুতে অতি গুরুত্বপূর্ণ এক ব্যক্তি। দিনে দিনে এই অনন্য মানুষটির বহুমুখী সক্ষমতার প্রকাশ সবাইকে আলোড়িত করছে।